~ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা - কীভাবে ও কখন থেকে প্রস্তুতি শুরু করবেন? ~ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে যাবার সিদ্ধান্ত যদি নিয়ে থাকেন, তাহলে প্রশ্ন হল কখন থেকে সেজন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য অর্থাৎ মাস্টার্স বা পিএইচডি তে ভর্তির জন্য কেবলমাত্র ব্যাচেলর্স শেষ হওয়ার পরেই প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেন। কিন্তু এই ব্যাপারটা একটু বড় মস্ত বড় ভুল। কারণ এই পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া এজন্য যা যা করা লাগে ও জানা লাগে সেগুলো আসলে স্নাতক পর্যায়ের মাঝামাঝি থেকেই শুরু করা দরকার। আসুন দেখা যাক, প্রস্তুতির জন্য কী কী কাজ করতে হবে এবং তার জন্য কতটা সময় আগে থেকে কাজ শুরু করতে হবে। এই লেখাটি আমার আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা বই এর ৫ম অধ্যায়। ** মাইন্ডসেট: শুরুতেই আসে মাইন্ডসেট বা চিন্তাধারার কথা। উচ্চশিক্ষার জন্য যদি আমেরিকায় আসতে চান, সেটা আগে থেকেই টার্গেট হিসাবে ঠিক করে রাখুন। লক্ষ্য স্থির থাকলে তবেই তো সেই লক্ষ্যে পৌছাবার তাগাদা আসবে, তাই না? দ্বিধাদ্বন্দ্ব করে লাভ নেই। যদি বিসিএস দিতে চান, সেইদিকে মন দেন। আর যদি উচ্চশিক্ষায় যেতে চান, তাহলে অন্য নৌকায় পা না দিয়ে এইদিকেই পূর্ণ মনোযোগ দিন।

** ইংরেজি জ্ঞান ও কমিউনিকেশন স্কিল: উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হবে ইংরেজি। কাজেই ইংরেজিতে শুদ্ধভাবে যোগাযোগ করা অভ্যাস করুন। প্রফেশনাল কমিউনিকেশনে সংক্ষিপ্ত বাক্য এবং সহজ শব্দ ব্যবহৃত হয়, সেভাবে লেখা অভ্যাস করুন। এটা করা দরকার আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে পড়ার শুরুর দিক থেকেই।

**স্নাতকের ফলাফল: ভর্তির ক্ষেত্রে আপনার স্নাতক পর্যায়ের ফলাফল দেখা হবে গুরুত্বের সাথে। কাজেই স্নাতক পর্যায়ে ভাল ফল বজায় রাখার চেষ্টা করুন পুরোটা সময়। বিশেষ করে আপনার স্নাতকের বিষয়ভিত্তিক ডিপার্টমেন্টাল কোর্সগুলোতে ভাল গ্রেড পাওয়ার চেষ্টা করুন।

**রিসার্চ: স্নাতকের ৩য় বর্ষ থেকে চেষ্টা করুন কোন রিসার্চ প্রজেক্টের সাথে জড়িত হওয়া যায় কি না। তখন থেকে চেষ্টা শুরু করে যদি পাশ করার সময় পর্যন্ত কাজ করে ছোটখাট একটা পেপারও পাবলিশ করতে পারেন, সেটা আপনার পিএইচডিতে ভর্তির ক্ষেত্রে খুব কাজে আসবে। এটা বাধ্যতামূলক না তবে ফান্ডিং সহ পিএইচডিতে ভর্তির ক্ষেত্রে এটা অনেক বেশি কাজে আসবে। মাস্টার্সে ভর্তির ক্ষেত্রে এটা অতটা গুরুত্বপূর্ণ না।

**ইউনিভার্সিটি সার্চ: মোটামুটিভাবে স্নাতকের ৩য় বর্ষ থেকে শুরু করুন ইউনিভার্সিটি রিসার্চ। এটা আবার কী? এটা হল নানা ইউনিভার্সিটির আপনার পছন্দের ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট ঘেঁটে তাদের পিএইচডি বা মাস্টার্স প্রোগ্রামের তথ্য পড়ে দেখুন। কী কী রিকয়ারমেন্ট আছে তা একটা স্প্রেডশিটে টুকে রাখুন। সেই ডিপার্টমেন্টের প্রফেসরদের ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখুন তাঁরা কীসের উপরে কাজ করছেন। তাঁদের কী কী পেপার আছে। সেই ডিপার্টমেন্টে যদি বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রী কেউ থেকে থাকেন, তাদের সাথে যোগাযোগ করে দেখুন। এই সংক্রান্ত সব তথ্য যা যা পাবেন, তা স্প্রেডশিটে সেইভ করে রাখুন। ইউএসনিউজ বা এরকম অন্যান্য রাংকিং সাইট থেকে আপনার পছন্দের বিষয়ে কোন কোন ইউনিভার্সিটি সেরা, সেটা জেনে নিন। এটা করার কারণ কী? কারণ হল আস্তে আস্তে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্কে ধারণা বাড়লে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিতে সুবিধা হবে, আর প্রফেসরদের কাজকর্ম সম্পর্কে ধারণা হলে তাঁদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন সহজে। ইমেইল করার সময়ে যদি প্রফেসর বুঝতে পারেন যে আপনি উনার কাজ সম্পর্কে জানেন, তাহলে সেটা অনেক ভাল ইম্প্রেশন তৈরীতে কাজে আসবে।

**প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ: উচ্চতর শিক্ষা বিশেষ করে পিএইচডি পর্যায়ে ফান্ডিং এর একটা বড় উৎস হল প্রফেসরদের কাছ থেকে রিসার্চ অ্যাসিস্টেন্টশিপ পাওয়া। কিন্তু একজন প্রফেসর আপনাকে না দেখে কেবল একটি ইমেইলের ভিত্তিতে কেন ফান্ডিং দিবেন? সেজন্য আসলে আপনাকে প্রফেসরদের সাথে অনেকদিন ধরে যোগাযোগ করতে হবে। আগের ধাপে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবেন, তখন আরো একটা কাজ করবেন তা হল প্রফেসরদের ইমেইল ঠিকানা যোগাড় করা। সেটা করার পরে তাঁদের সম্পর্কে ভাল মত রিসার্চ করে তার পর সাহস করে ইমেইল পাঠাবেন। এই বইয়ের একটি অধ্যায়ে বলা আছে, কীভাবে সেই যোগাযোগটা করতে হবে। সেই ইমেইলের শুরুতেই ফান্ডিং দেন বলা ঠিক না, বরং প্রফেসরের কাজের কথা আপনি জানেন সেটা বোঝাতে হবে, এবং কায়দা করে আপনি সেই বিষয়ে আগ্রহী সেটা বোঝাতে হবে (বিস্তারিত সেই অধ্যায়ে দেখুন)। এভাবে অনেকদিন ধরে ইমেইল চালাচালি করে প্রফেসরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন হলে সহজেই ফান্ডিং পাওয়া সম্ভব।

**টেস্ট স্কোর: উচ্চতর শিক্ষার আবেদনের জন্য আপনার লাগবে ইংরেজি ভাষার টেস্ট স্কোর (টোফেল, আইএলটিএস, ডুওলিঙ্গো) এবং জিআরই। অনেকেই একটা ভুল করেন — তাঁরা ভাবেন যে ব্যাচেলর্স শেষ হলে তার পরেই কেবল এই পরীক্ষা গুলো দিবেন। আসলে পাশ করার পরে চাকুরি বা অন্যান্য কাজে সবাই এতোই ব্যস্ত হয়ে যান এই পরীক্ষাগুলোর জন্য পড়ার উদ্যম বা সময় কোনটাই থাকে না। ফলে চেষ্টা করেও ভাল স্কোর তোলা যায় না। সেজন্য আসলে আমি পরামর্শ দিব তৃতীয় বর্ষের শেষ বা চতুর্থ বর্ষের শুরু থেকে এই পরীক্ষাগুলোর পড়া শুরু করুন এবং স্নাতক শেষ হওয়ার আগেই এগুলো দিয়ে দিন। যদি ফল আশানুরূপ নাও হয়, তাহলেও পাশ করার পরে আবার পরীক্ষাগুলো দিতে পারবেন।

** চাকুরি করার পরে পিএইচডি/মাস্টার্সে আবেদন: অনেকে প্রশ্ন করেছেন আমাকে নানা সময়ে — তাঁদের বয়স ৩০ এর কোঠায়। বেশ কয়েক বছর চাকুরি করেছেন। এই অবস্থায় উচ্চশিক্ষায় আমেরিকায় যাওয়া ঠিক হবে কি না। এই প্রশ্নের জবাব আসলে অনেক কিছুর উপরে নির্ভর করে। পরিবার ও সন্তান আছে কি না তা একটা বড় ফ্যাক্টর। মাস্টার্সের মেয়াদ কম, তাই মাস্টার্সের জন্য অল্প সময়ে পরিবারকে দেশে রেখে পড়াশোনা করা সম্ভব। অথবা পরিবার নিয়ে এসেও অল্প সময়ের জন্য কষ্ট করে চালিয়ে নেয়া যায়। পিএইচডি করার সময়টা দীর্ঘ। এই দীর্ঘ সময় ধরে পিএইচডি শিক্ষার্থীর স্বল্প বেতনে সন্তানসহ পরিবার চালানো বেশ কষ্টকর। তার উপরে পিএইচডি শেষ করতে যদি চল্লিশের কোঠায় বয়স চলে যায়, তাহলে সেই বয়সে একেবারে শুরু থেকে ক্যারিয়ার গড়াও অনেক কঠিন। যদি দেশে বা অন্যত্র ফিরে যাবার পরিকল্পনা ও সুযোগ থাকে তাহলে এই বয়সে পিএইচডি করা হয়তো চলে। অধিকাংশের জন্যই পরামর্শ দিব, বয়স ২০ বা ৩০ এর কোঠায় থাকতেই উচ্চ শিক্ষা শুরু করে দিন। এর পরে যে সম্ভব না তা নয়, কিন্তু সেটা অনেক কষ্টকর, নিজের ও পরিবার দুইটার জন্যই।

ক্রেডিট: রাগিব হাসান

কিভাবে শুরু করবেন প্রস্তুতি তা জানতে নিচের সেকশন গুলো ফলো করতে পারেন।

Prepare and sit for GRE

Prepare your Resume

Prepare your Portfolio Site

Prepare for IELTS

Email the Professors

Create profile in University Portal

Prepare your SOP

Collect your LORs